রমজান মাসে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের জন্য কর্মঘণ্টা কমানো হলো

রাজ্যের সরকারি স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের জন্য এলো এক বড় সুখবর। সরকার ঘোষণা করেছে, রমজান মাস উপলক্ষে মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের কাজের সময় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা বিভাগ থেকে ইতিমধ্যে এই বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।

রমজান মাসে বিশেষ ব্যবস্থা — কমলো কাজের সময়

রমজান মাসে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের জন্য কর্মঘণ্টা কমানো হলো

রমজান মাস মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এক পবিত্র সময়। এই সময়ে দিনের আলো থাকাকালীন রোজা রাখা হয়, যা মানসিক এবং শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জিং। তাই শিক্ষকদের যাতে সহজে রোজা পালন করা সম্ভব হয়, সেজন্য রাজ্যের শিক্ষা বিভাগ বিশেষ ছাড় ঘোষণা করেছে।

সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, মুসলিম শিক্ষক ও কর্মচারীরা রোজা রাখার সুবিধার্থে নিয়মিত সময়ের চেয়ে এক ঘণ্টা আগে স্কুল বা অফিস থেকে বাড়ি যেতে পারবেন। সেই সঙ্গে তাঁদের অফিসে এক ঘণ্টা আগেই যোগদান করতে হবে।

স্কুলের সময়সূচীতে পরিবর্তন

শিক্ষা বিভাগের জারি করা নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, মুসলিম শিক্ষকরা এক ঘণ্টা আগে স্কুল ছেড়ে যেতে পারবেন। এর ফলে তাঁরা সন্ধ্যায় ইফতার করার জন্য বাড়ি ফিরে প্রস্তুতি নিতে পারবেন এবং কিছুটা বিশ্রামও নিতে পারবেন। এটি তাঁদের কর্মক্ষমতা বজায় রাখতেও সহায়ক হবে।

অফিসের কর্মচারীদের জন্য বিশেষ ছাড়

শুধু স্কুলের শিক্ষকরা নন, শিক্ষা বিভাগের অধীনে থাকা অফিসগুলিতেও মুসলিম কর্মচারীদের জন্য একই নিয়ম কার্যকর হবে। তাঁদের জন্যও এক ঘণ্টা আগে অফিস ত্যাগ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ

মাধ্যমিক শিক্ষা পরিচালক মনীশ কুমার সিং এই নির্দেশিকা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য সমস্ত জেলার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের (ডিইও) কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছেন। নির্দেশনায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, প্রত্যেকটি স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এই নতুন সময়সূচী অনুসরণ করতে হবে এবং রোজাদার শিক্ষক ও কর্মচারীদের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

কেন এই বিশেষ ব্যবস্থা?

এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হলো ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি সম্মান জানানো এবং শিক্ষকদের শারীরিক-মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করা। রমজান মাসে দীর্ঘ সময় ধরে উপোস থেকে কাজ করা শারীরিকভাবে ক্লান্তিকর হতে পারে। তাই তাঁদের কর্মক্ষেত্রে যাতে চাপ অনুভব না হয়, সে দিকটি মাথায় রেখেই সময়সূচী পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক সংগঠনের অনুরোধে সিদ্ধান্ত

শিক্ষক সংগঠনগুলোর তরফ থেকেও দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের ছাড়ের অনুরোধ করা হচ্ছিল। তাঁদের অনুরোধের ভিত্তিতেই রাজ্য সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে শিক্ষকরা তাঁদের ধর্মীয় আচার পালন করতে পারছেন, পাশাপাশি তাঁদের কর্মদায়িত্বও সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারছেন।

কোন কোন রাজ্যে কার্যকর হবে?

প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে নয়, এই নতুন নিয়ম মূলত বিহারে কার্যকর করা হয়েছে। বিহারের সমস্ত সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং প্রকল্প বিদ্যালয়ের মুসলিম শিক্ষক ও কর্মচারীরা এই সুবিধা পাবেন।

শেষ কথা

রমজান মাসে মুসলিম শিক্ষকদের জন্য এই ছাড় একটি মানবিক সিদ্ধান্ত। এটি যেমন তাঁদের ধর্মীয় রীতিনীতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, তেমনই কর্মজীবনের ভারসাম্য রক্ষায়ও সাহায্য করবে। আশা করা যায়, অন্যান্য রাজ্যেও এমন ব্যবস্থা কার্যকর হবে, যাতে ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং পেশাগত দায়িত্ব একসঙ্গে বজায় রাখা সম্ভব হয়।

Leave a Comment